যশোর প্রতিনিধি
এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম হাতে বিএনপি নেতাদের সাথে এমপি রণজিত রায়ের একটি ছবি গত মঙ্গলবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন “সখি তুমি কার”? কারণ, ঢাকার ন্যাম ভবনে ওই ছবিতে এমপি রণজিতের সঙ্গে নাশকতা মামলার দুই আসামি ও যশোর বিএনপির দুই নেতাকে দেখা যায়। এই ছবি ছাড়াও আরও দুটি ছবিতে নাশকতা মামলার আসামিসহ কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে এমপি রণজিৎকে খাওয়া-দাওয়া করতে দেখা যায়।
এর আগেও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত যশোরের আমজাদ মোল্লা বা আমজাদ রাজাকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীকে নানাভাবে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে এমপি রণজিতের বিরুদ্ধে, যা নিয়ে উপজেলা নেতাকর্মীর মধ্যে সৃষ্টি হয় ক্ষোভ। ফলে উপজেলা ও তৃণমূল নেতাকর্মীর সঙ্গে এমপির দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, একাধিকবার যশোর-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের এমপি হওয়া রণজিত কুমার এবারও নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। কিন্তু দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁকে এড়িয়ে চলছেন। ১৯ নভেম্বর দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনেন রণজিত কুমার। সেদিনই ঢাকার ন্যাম ভবনে একটি গ্রুপ ছবিতে রণজিত রায়ের পাশে বাঘারপাড়ার বর্তমান পৌর মেয়র কামরুজ্জামান বাচ্চু, পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামকে দেখা যায়। শহিদুল ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার চান্দুটিয়া গ্রামে নাশকতা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। ছবিতে এমপির সঙ্গে বাঘারপাড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি এবং উপজেলা বিএনপি সদস্য আরিফ খান তুর্কিকেও দেখা যায়। তুর্কির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট ও ১৪ জুনের দুটি নাশকতার মামলা আছে। এ ছাড়া ছবিতে থাকা বাঘারপাড়া পৌরসভার মহিরণ এলাকার জামির হোসেন ও সাজ্জাদ খন্দকার বিএনপি পরিবারের সদস্য বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী বলেন, ‘আমাদের এমপি রণজিৎ বাবু তো আওয়ামী লীগ করেন না। উনি বিএনপি ও জামায়াত নিয়ে চলছেন। চাকরি দিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতের লোকজনদের। আমজাদ রাজাকারের পরিবারকে সমর্থন দিয়েছেন। বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকেও জানানো হয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা তাঁর পক্ষে নেই। দল যদি তাঁকে মনোনয়ন দেয়, সে ক্ষেত্রে কাজ করব; কিন্তু এলাকার জনগণ এমপি রণজিৎকে চাচ্ছে না। সর্বশেষ ২০ নভেম্বর বিষয়টি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও জানানো হয়েছে।
এমপির সঙ্গে নাশকতা মামলার আসামিদের থাকা প্রসঙ্গে বাঘারপাড়া থানার ওসি শাহাদাত হোসেন বলেন, বিষয়টি জানা নেই। কাগজপত্র দেখে বলতে পারব।
দলীয় নেতাদের আওয়ামী লীগের এমপির সঙ্গে মনোনয়ন ফরম কিনতে যাওয়া প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির কোনো নেতা কথা বলেননি। যশোর বিএনপির শীর্ষ নেতারা বর্তমানে আত্মগোপনে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি রণজিত কুমার রায় বলেন, তুর্কি আর শহিদুল নাশকতা মামলার আসামি কিনা আমার জানা নেই। ছবিতে বিএনপি নেতাদের থাকা এবং সমালোচনা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে কোনো মন্তব্য করবেন না জানিয়ে এমপি রণজিত ফোন কেটে দেন।