কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি,মো:হানিফ মিয়া
কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের নাগেরচর-দূর্গাপুর সড়কে সরকারি খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানার অধীনে জমি দখল করে দেয়াল নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
এতে সড়কটি সংকুচিত হয়ে পড়ায় পথচারী ও এলাকাবাসী চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
তথ্য ভিত্তিতে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত এই গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ সড়কটি সম্প্রতি আবারো পুনরায় নির্মাণের জন্য টেন্ডারকৃত হয় এবং কাজও শুরু হয়েছে।
উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সড়কটি প্রশস্ত করার পরিকল্পনা থাকলেও জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রাস্তার দুই পাশ থেকে সমানভাবে জায়গা না দেওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। দুইপাশের কেউ স্বেচ্ছায় জায়গা ছাড়তে রাজি হচ্ছেন না।
এ বিষয়ে নাগেরচর গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক আব্দুল আজিজ মাস্টার এবং মোকবুল হোসেন অভিযোগ করে জানান, সাবেক চেয়ারম্যান জিএম মোশাররফ হোসেনের ছেলে ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা জিএম আনিছুর রহমান জুয়েল সরকারি খাস জমির প্রায় ১০-১১ ফুট জায়গা দখল করে রাস্তার পশ্চিম পাশে পাকা দেয়াল নির্মাণ করেছেন। তাদের ভাষায়, জি এম মোশাররফ হোসেন আওয়ামীলীগের রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে সরকারি জমি দখল করে তিনি এই দেওয়ালের নির্মাণ কাজ করে গিয়েছেন।
এ নিয়ে স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
পরবর্তীতে বলরামপুর ইউনিয়ন তহসিল অফিসের তহসিলদার, এসি ল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অভিযোগকৃত জমির পরিমাপ করা হয়। এতে প্রমাণিত হয় যে, জিএম আনিছুর রহমান জুয়েল সম্পূর্ণরূপে সরকারি জমির উপর দেয়াল নির্মাণ করেছেন। সার্ভেয়ার জানান, এ বিষয়ে ইউএনও’কে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে এবং তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এছাড়া রাস্তার দক্ষিণ পাশের জমি নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা সুবিদ আলী মোল্লা, বাবুল মোল্লা ও জসিম উদ্দিন মোল্লা। তাদের দাবি, “সাবেক চেয়ারম্যান জিএম মোশাররফ হোসেন তার চেয়ারম্যান থাকাকালীন একতরফাভাবে আমাদের জমির সাড়ে তিন ফুট জায়গা রাস্তা নির্মাণে ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে তার ছেলে জুয়েল দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জায়গায় উচু করে দেয়াল নির্মাণ করে।
এখন রাস্তা পুনর্নির্মাণ হচ্ছে, তাই উভয় দিক থেকেই সমানভাবে জায়গা ছেড়ে রাস্তা নির্মাণ করা জরুরি।” এ বিষয়ে গ্রামের বিচারকদের নিয়ে মীমাংসাকৃত
রায় অবমাননা করে এড়িয়ে যাচ্ছে জুয়েল।
দূর্গাপুর এলাকাবাসী আরও জানান, “ইউপি অফিস থেকে একাধিকবার আমিন দিয়ে জমি মেপে দেখা গেছে—জুয়েল আমাদের সাড়ে তিন ফুট জমি দখল করে রেখেছেন। আমরা সেই জায়গা ফেরত চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জিএম আনিছুর রহমান জুয়েল বলেন, “আমি কারও জমি দখল করিনি। আমাদের পারিবারিক জমিতেই দেয়াল নির্মাণ করেছি। তবুও কেউ অভিযোগ করলে, আমি আইনি প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করব।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানার অধীনে জমিতে দেয়াল নির্মাণ করায় সড়কটির প্রস্থ কম থাকায়,যার ফলে সাধারণ মানুষের চলাচলে চরম বিঘ্ন ঘটছে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও শিক্ষার্থীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
এলাকাবাসীর একমাত্র দাবি—অবিলম্বে অবৈধভাবে নির্মিত দেয়ালগুলো উচ্ছেদ করে সড়কটি পুনর্গঠন করতে হবে, যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে এবং সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাধাহীন ভাবে বাস্তবায়ন হয়।