মোঃ সাহাবুল আলম, নাটোর প্রতিনিধি
তাদের আলাদা পরিচয় নেই, ছিল না কোনো স্বতন্ত্র নিঃশ্বাসও। মায়ের গর্ভেই যেন পরস্পরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিল—ভালোবাসা আর ভাগ্য যেন একসাথে গাঁথা। কিন্তু সেই ভালোবাসার জালও জীবন দিতে পারেনি।
নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া আমেনা হাসপাতালে শুক্রবার দুপুর ৩টায় জন্ম নেয় দুটি জোড়া লাগানো শিশু। একই শরীর, একত্র হৃদস্পন্দন। মাথা থেকে বুকে—এক সত্তা, অথচ দুইটি প্রাণের চেষ্টা। চারটি পা আলাদা হলেও চার হাত যেন একে অপরকে শেষবারের মতো বুকে জড়িয়ে রেখেছিল।
চিকিৎসকরা জানালেন, জন্মের আগেই থেমে গেছে তাদের জীবনঘড়ি। আলট্রাসনোগ্রাফিতে জমজের অস্তিত্ব ধরা পড়লেও, কে জানতো এমন করুণ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
মা জরুফা খাতুনের গলা ভার—“সাত মাস ২৮ দিন কেটেছিল গর্ভে। তখনো বুঝিনি এমন কিছু হবে। মনে হয় ওরা পৃথিবীর আলো দেখার আগেই বিদায় নিয়েছে।”
বাগাতিপাড়ার চন্দ্রখৈল গ্রামের গৃহবধূ জরুফার এটি দ্বিতীয় সন্তান। প্রথম সন্তানও কন্যা, বয়স সাত বছর। এবারও কন্যা হয়েছিল, কিন্তু দু’জন হয়েও যেন একাত্মা ছিল তারা।
আমেনা হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আনছারুল হক বলেন, “জোড়া লাগানো শিশুদের জন্ম আমরা সচরাচর বই কিংবা টিভির পর্দায় দেখি। তারা যদি বাঁচতো, হয়তো অস্ত্রোপচার করে আলাদা করার চেষ্টা করা যেত। কিন্তু এই দুই শিশুর জন্মই হয়েছিল নিথর অবস্থায়। তার উপর তারা অপরিপক্বও ছিল।”
হাসপাতালের বাতাস যেন ভারী হয়ে আসে। নিঃসাড় দুটো শরীর, আর তাদের মা—যার চোখে শুধুই অপূর্ণ এক স্বপ্নের কান্না।