নিজস্ব প্রতিনিধি , হাসমত
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদুল আযহার সবচেয়ে বড় ও আড়ম্বরপূর্ণ জামাত। ঈদের সকালে ধর্মীয় শ্রদ্ধা, আনন্দ আর উৎসবের আমেজে মুখর ছিল পুরো এলাকা। সকাল ৮টায় নির্ধারিত সময়ে শুরু হওয়া এই জামাতে অংশ নেন তিন হাজারেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।
পচামাড়িয়া, কানমারিয়া, যশোপাড়া, মোল্লাপাড়া, সাতবাড়িয়া সহ আশপাশের গ্রামের মানুষ ভোর হতে না হতেই ভিড় জমাতে থাকেন ঈদগাহ প্রাঙ্গণে। চারপাশে ছিল শুধু একটাই দৃশ্য—সাদা লাল নীল পাঞ্জাবি পড়ে তাকওয়ার আলোকছায়ায় মোড়ানো মানুষ একসাথে নত হচ্ছেন আল্লাহর দরবারে।
ঈদের নামাজে ইমামতি করেন হুজুর আমিনুল ইসলাম। নামাজ শেষে দেওয়া খুতবায় তিনি কুরবানির প্রকৃত তাৎপর্য ও আত্মত্যাগের মহিমা তুলে ধরেন। একইসাথে সমাজে ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা এবং মানবতার বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কানমারিয়া থেকে আসা আলাল মিয়া বলেন, “প্রতিবছর এখানেই নামাজ পড়ি, তবে এবার মানুষের ভিড় দেখে মনে হচ্ছে, ঈদের আনন্দ যেন সাতবাড়িয়াকেই আলাদাভাবে বেছে নিয়েছে।”
পচামাড়িয়া থেকে আগত সায়েম উদ্দিন বলেন, “এই মাঠে নামাজ পড়লে এক অদ্ভুত শান্তি পাই। সবাই একসাথে মিলেমিশে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি, সেটাই তো ঈদের আসল সৌন্দর্য।”
সাতবাড়িয়া গ্রামের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, এলাকাবাসীর সম্মিলিত চেষ্টায় এত বড় জামাত সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তারা বলেন, “এই জামাত শুধু নামাজ নয়, এটি সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীক। আমরা গর্বিত এমন একটি ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারছি বলে।”
নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত মোনাজাতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণের পাশাপাশি ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের নিপীড়িত মুসলিম জনগণের শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। মোনাজাতের সময় অনেক মুসল্লির চোখে দেখা যায় অশ্রু, যা হৃদয়ের গভীর আবেগ আর প্রার্থনার নিদর্শন।
মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা একে অপরকে কোলাকুলি করেন, শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন ঈদের আনন্দ। ঈদগাহ মাঠে দেখা যায় হৃদয়ের উষ্ণতায় গড়ে ওঠা মানবিক সংযোগ, যেখানে ধর্মীয় অনুভূতি আর সামাজিক বন্ধন মিলেমিশে এক অনন্য দৃষ্টান্ত গড়ে তোলে।
সাতবাড়িয়া ঈদগাহ মাঠে ঈদুল আযহার এ বৃহৎ জামাত একদিকে যেমন ধর্মীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ, অন্যদিকে সামাজিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে।