রতন কুমার ঘোষ, ভেড়ামারা প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিএনপির সার্চ কমিটির বৈঠককে কেন্দ্র করে গোলাগুলি, হামলা,ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গোহাট সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৮ রাউন্ড গুলি, দুটি বাড়ি ও একটি মুদির দোকানে হামলা-ভাঙচুর এবং তিন লক্ষ টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ৩ জন আহত অবস্থায় ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।এক্ষেত্রে ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির দুই গ্রুপ একে অপরকে দোষারোপ করছে।
গতকাল ১৭ জুন মঙ্গলবার উপজেলা ধরমপুর ইউনিয়নের গোঘাট সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।পরিস্থিতির অবনতি হলে এসময় ব্যাপক পরিমাণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়ন করা হয়। রাত প্রায় ১২ টার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টায় সাতবাড়িয়া গোহাট সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, ১৭ই জুন বিকেল চারটায় ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সার্চ কমিটির সমন্বয়ে ওয়ার্ড কমিটির ভোটার লিস্ট গঠনের প্রস্তুতি চলছিল।এই বৈঠক রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত চলে। বৈঠক শেষ হলে নেতাকর্মীরা যে যার মত চলে যায়। ঠিক এমন সময় গোলাগুলির শব্দ চারিদিকে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বিএনপি’র দুইটি গ্রুপ দুই দিকে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সেনাবাহিনীকে খবর দেয়। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।এসময় সংঘর্ষে এক পক্ষের বিএনপি কর্মী হামিদুল ও আরিফ আহত হয়। অপর পক্ষের বিএনপি কর্মী টিপু মেকারকে আহত অবস্থায় অন্যপক্ষ দোকানে শাটার বন্দি অবস্থায় রাখে।পরবর্তীতে তাদেরকে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিঠু বলেন,মঙ্গলবার বিকাল থেকে সার্চ কমিটির মিটিং চলছিল।মিটিং এর প্রস্তাবনা শেষে আমরা যে যার মত চলে যাচ্ছিলাম। ঠিক এমন মুহূর্তে সার্চ কমিটির সদস্য শামসুলের নির্দেশে রাজন, স্বপন, কিবরিয়া, লিমন, টিপু আমাদের কর্মীদের ওপর গুলি করে।এই সময় আমাদের দুই কর্মী আরিফের মাথায় ও হামিদুলের ডান হাতের কনুইতে গুলি লেগে আহত হয়। তাদেরকে বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি রবিউল সরকার বলেন, ধরমপুর ইউনিয়নের সার্চ কমিটির সদস্য শামসুল খুবই বেপরোয়া আচরণ করেন। তিনি তার ছেলে সহ অন্য গুন্ডাদের দিয়ে আজ আক্রমণ চালিয়েছেন। ছাত্রদল নেতা আকাশের বাড়িতে হামলার ঘটনা তিনি নাকচ করে দিয়ে বলেন, আমরা কোনভাবেই এই হামলার সাথে জড়িত না।
অপরদিকে ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সার্চ কমিটির সদস্য শামসুল জানান,আমি ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি প্রার্থী হওয়ার কারণেই মূলত আজকের এই নাটক শুরু করেছে। সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে আজকের এই ঘটনা ঘটনা হয়েছে। মিটিং শেষে আসাদুজ্জামান মিঠু আমাকে গাড়িতে তুলে দিয়েছে। আমি চলে আসার পরেই মূলত এই ঘটনা ঘটেছে। এখানে কোন মতেই আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। ওরা মূলত আমাকে আর আমার ছেলে রাজনকে টার্গেট করেছে।আজকের এই ঘটনা মিঠু, রবিউল সরকার আর ধরমপুর ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক নান্টুন নেতৃত্বে ঘটেছে। এ সময় লালন, শুকুর, জিয়া, নিশান এরা মারামারিতে অংশগ্রহণ করেছে। তারা কলেজ ছাত্র দলের সদস্য সচিব
আকাশের বাড়িতেও নির্মমভাবে হামলা চালিয়েছে। তাদের বাড়ি ও দোকানে ব্যাপক হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।
কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব আকাশের বোন মোসাঃ চাঁদনী খাতুন কেঁদে কেঁদে জানান, আমি আমার বাবার বাড়িতে বিয়ে খেতে এসেছি। লুটপাট কারীরা আমার সমস্ত গহনা,আমার বাবার উপার্জিত টাকা পয়সা জোর করে লুট করে নিয়ে গেছে। এই দেখেন আমার বাড়িতে কত ভাঙচুর করেছে। আমি এর কঠোর বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। আমার ভাই সবেমাত্র রাজনীতিতে যোগ দিয়েছে। কেন আমার এত বড় ক্ষতি করল? আমি এর বিচার চাই।
ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডঃ পল্লব জানান, দুজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। একজন মাথায় আঘাত পেয়েছে সেটা গুলির কোন আঘাত নয়। অপরজন হাতের কনুইতে আঘাত পেয়েছে। সেটা গুলি আঘাত কিনা স্যারদের সাথে পরামর্শ করে বলতে পারব।
ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ (চলতি দায়িত্ব) রাকিবুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন,উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের গোহাট সংলগ্ন এলাকায় বিএনপি সার্চ কমিটির বৈঠককে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছিল।এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় সেনাবাহিনী এসেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সাহায্য করে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।এ বিষয়ে থানায় এখনো কোনো অভিযোগ পড়ে নাই। তবে পুলিশ তৎপর আছে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য।আহত ৩জন উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছে।