জাহাঙ্গীর আলম অর্ণব
সরকারি এম এম কলেজ।
(প্রথম পর্ব)
…..নাগরিক বিষণ্নতায় ঘেরা এ শহর।শহরের চারিদিক টা আজকাল অনেকটাই নিস্তব্ধ থাকে।বিষণ্নতায় ঘেরা এই শহরেই অনেকের- ই বসবাস। নিলয়ও এই শহরের একজন বাসিন্দা। সাধামঠা জীবন যাপন-ই তার পছন্দ। সময়টা ছিল ১৯৫২ সাল। সাদা পাঞ্জাবী একটা ঘড়ি আর প্রিয় চশমা টি পরে কোন এক পড়ন্ত বিকালে নিলয় হেঁটে চলেছে নীরবে,কাঁধে ঝুলানো একটি গেরুয়া রং এর ব্যাগ এবং সাথে আছে একটি বাই সাইকেল। নিলয়ের মনটা ছিল সরল প্রকৃতির, তবুও বুকে ছিল অসীম সাহস আর হৃদয়ে ছিল প্রবল দেশপ্রেম।তবে সে আনমনে অনেক কিছু ভাপতো,ভাপতো দেশকে নিয়ে আর দেশের মানুষ কে নিয়ে।নিলয় এর বাসা যশোর শহরে,কিন্তু নিজ স্বপ্ন পূরণে পাড়ি জমিয়েছে স্বপ্নের শহর ঢাকা ,আজ সে ঢাকা শহরের বাসিন্দা ।অনেক স্বপ্ন নিয়েই গন্তব্যে ছুটে চলার শহরের নাম ঢাকা। কম` ব্যস্ততার এই শহরে নিলয় ও একটি কমে` নিবীড় ভাবে জড়িয়ে আছে। নিলয় একটি প্লেকাড` মেকার নামে একটি প্রতিষ্ঠান এ কাজ করতো। অল্প কিছু যা পেত তাতেই সে নিজেকে চালিয়ে নিত।
নিলয় যে কলোনিতে থাকত সেই কলোনির অনেক লোকই তার ব্যবহারে মুগ্ধ।সবাই অনেক ভালোবাসে নিলয় কে। নিলয়ের কাছের বন্ধু সুমন। জীবনে যাই ঘটুক সুমন কে সেটা তাকে বলতেই হবে। সময়ের পরিক্রমায় আজ কম`ব্যাস্ততায় চলছে তাঁদের জীবন।নিলয় যেই কলোনিতে থাকতো সেই কলোনির একটি মেয়ের নাম রুপা।রুপা কিছুদিন হলো কলোনিতে একমদ ই নতুন। রুপার বাবা একজন সরকারি চাকরিজীবী। চাকরি সূত্রেই বদলি হয়ে আসা।রুপার বাবা গোলাম হামিদ এবং মা রাবিয়া বেগম।মা -বাবার অনেক আদরের মেয়ে রুপা। রুপা পড়াশোনায় অনেক ভালো।রুপা কে মহিমা বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি` করে দেন তার বাবা হামিদ সাহেব।বোরকা পরিহিত রুপা নামের মেয়েটি সবুজ কাগজে মোড়ক বাধা বইগুলি গুছিয়ে বিদ্যালয়ে রওনা হতো রিকশা করে।সে আসতো ঠিক কখন ও রিকশায় আবার কখনও হেঁটে।এটাই ছিল তার প্রভাতের মিষ্টি রোদের পথচলার এক অবিচ্ছিন্ন সময়ের জীবনযাত্রা।নিলয়ের আজ মন ভালো নেই।তবু ও কাঁধে ব্যাগ আর প্রিয় বাইসাইকেলটা নিয়ে আনমনে হেঁটে চলেছে কম`স্থলের দিকে।নিলয়ের কাজ ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দলের প্রেক্ষাপট নিয়ে পোস্টার বানানো আর সেটাতে দাবি আদায়ের জোরালো মনের কথা গুলি কলম দিয়ে স্পষ্ট করে দেওয়া।
নিলয়ের যাত্রা পথে হঠাৎ চোখ পড়ে সম্মুখ দিক থেকে ছুটে আসা রিকশায় থাকা একটি বোরকা পরিহিত মেয়ের চোখে। অন্যকিছু নয়, শুধু চোখ দেখে নিলয়ের মন কাথারী তে কোন এক চেনা ইস্পন্দনের ছায়া ফুটে উঠে।রিকশাটি পাশ কাটিয়ে যাবার সময় অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ নিলয়। কিছুদূর যেতে না যেতেই হঠাৎ রিকশা থেকে নেমে রুপা বাসায় ভিতর চলে যাই।নিলয় তখন ও চোখের চশমা টি খুলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুপার যাত্রা পথের দিকে।হঠাৎ পেছন থেকে একটি হাতের স্পর্শে` নিলয় চমকে উঠলো।
সুমনঃ কিরে তুই এখানে!!!
নিলয়ঃ ইয়ে মানে হ্যাঁ দোস্ত।দেখছিলাম।
সুমনঃ কি??
নিলয়ঃ চল তোকে পরে বলবো।এখন মিটিং এর সময় হয়ে যাচ্ছে।
সুমনঃ আজব,,কি হলো তোর আজ !!! হ্যাঁ চল
নিলয়ের মনে আজ এক প্রশান্তির ছোঁয়া লেগেছে।যেন অচেনা মেয়েটির জন্য রিদয় গহীনে অজস্র ভালোবাসার স্নিগ্ধ আবেশভর্তি সুখের উল্লাসের জোয়ার বয়ে চলেছে ।
চলবে…………..