প্রতি বছরের মতো এবারও বাঙালির সংস্কৃতির অন্যতম নবান্ন উৎসব কে ঘিরে জমে উঠেছে মাছের মেলা। শীতের সকালে ঘন কুয়াশায় খানিক দূরের দৃশ্য ঝাপসা হলেও জমে উঠেছে দেড় যুগের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা।
জয়পুরহাটের কালাইয়ে অগ্রহায়ন মাসের প্রথম সপ্তাহে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে এক দিনের মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কালাই-মোকামতলা মহাসড়কের পাশে কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারে মাছ ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ডাক হাকের মাধ্যমে ক্রেতাদের মাছ কিনতে আগ্রহী করে তুলছে। সেখানে সুন্দর করে সাজানো কাতলা, রুই, মৃগেল, চিতল, ব্ল্যাককার্প, গ্রাসকার্প, কার্ফু, কালবাউশ, ব্রিগেড, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের মাছ।
রবিবার ভোর থেকে সারি সারি হয়ে বসা মাছের মাছের মেলায় উপচে পড়া ভীড়। তিন কেজি থেকে শুরু করে ১৩ কেজি ওজন পর্যন্ত মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে মেলায়। মাছের আকার অনুযায়ী প্রতি কেজি মাছ ৩শ ৫০ থেকে ১২শ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারাও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কিনছেন ঐসব মাছ। আবার দেখতে এসেছেন অনেকেই।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের পাঁচশিরা বাজারে নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে এ মাছের মেলায় শুধুই মাছ কেনার বিষয় নয়, আছে একধরনের জামাই-মেয়েদের কেনার প্রতিযোগিতা। কোন জামাই কত বড় মাছ কিনলেন, সেটাই আসল বিষয়। প্রতিযোগিতায় নীরব অংশগ্রহণ করে শ্বশুররা।
এই মেলা কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে এলাকার মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকেই দাওয়াত দেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে শত..শত মানুষ মেলার উৎসব দেখতে আসেন। এ দিনটিকে ঘিরে এখানে দিনব্যাপী চলে মাছ কেনা ও বিক্রি করার উৎসব। কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারে মাছ নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। অর্ধশতাধিক দোকানে এসব মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। দূর-দূরান্তর থেকে দলে দলে লোকজন মেলায় এসেছেন মাছ কিনতে। ক্রেতারা মাছের দাম হাকাচ্ছেন, ক্রেতারা কিনছেন, আবার কেউ কেউ সেলফি তুলতেও ব্যস্থ । শুধু সেলফি তুলেই শেষ নয়। মাছ মেলার ছবি দিয়ে কেউ কেউ আবার ঝড় তুলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও। এই মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসেছিল এই মেলায়। ক্রেতারা খালিহাতে ফিরছেন না কেউ। সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী মাছ কিনে খুশিমনে বাড়ি ফিরছেন। মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রাম-মহল্লায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নাইওর এসেছেন মেয়ে ও জামাই। নিমন্ত্রণ করা হয়েছে আত্মীয়-স্বজনকেও। মেলা উপলক্ষে ওই যেন এলাকায় আনন্দ বিরাজ করছিল। এই দিনটির জন্য পুরো বছর অপেক্ষায় থাকেন কালাই উপজেলাবাসি।
মাছ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ১২০০ টাকা কেজি দরে ১২ কেজি ওজনের কাতল মাছ বিক্রি করেছি বগুড়ার এক ক্রেতার কাছে এটাই এ মেলার সবচেয়ে বড় মাছ। মাছ ব্যবসায়ী রাজু, বাবু ছাইফুল, ও মানিক সহ অনেকে জানান,মাছের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হলেও বেচা কেনা সে তুলনায় কম। তারপরও বেশি লাভেরই প্রত্যাশা করছেন তারা।
হাট ইজারাদারের সহপাঠী ময়েন উদ্দিন বলেন, শুধু জয়পুরহাট নয় বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা এ মেলায় বিভিন্ন ধরনের মাছ এনে এ মেলায় বিক্রি করেন। এবার মাছের বাজার স্বাভাবিক আছে এতে করে সবাই মাছ কিনতে পারবে।
কালাই উপজেলা মৎস কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, নবান্ন উপলক্ষে প্রতিবছর অগ্রাহন মাসের প্রথম সপ্তাহে পাঁচশিরা বাজারে মৎস্য মেলার আয়োজন করা হয়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব অনুষ্ঠান। এ মেলায় জয়পুরহাট জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে মাছ ক্রেতা-বিক্রেতা আসেন। মেলাটিকে সার্বক্ষণিক পরিদর্শনে রাখা হয়েছে। মেলায় কেউ যেনো নিষিদ্ধ মাছ বিক্রি করতে না পারে সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।