মোঃ মনিরুল ইসলাম ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে তাদের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে রবিবার (১লা ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এ স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শুরুতেই ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
উক্ত স্মরণ সভায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতা তাদের সাথে সে সময়ের নির্বিচারে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সকল ধরনের নির্যাতনের স্মৃতি শেয়ার করেন। তাদেরকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আওয়ামীলীগের দোসরা কীভাবে আক্রমণ করেন তা তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
আহত আসাদ মোড়ের আসাদুলের ছেলে আতিকুল ইসলাম বলেন, ৪ তারিখে ছাত্র আন্দোলনে আসার সময় আমাদের বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে, তারপর আমরা এসে বাধার মুখে পড়ি সাদ্দাম মোড়ে, সে বাধা অতিক্রম করে আমরা জামতলায় আসি, ওখান থেকে যখন থানার সামনে আসি, সেখানে পুলিশ বুলেট মারে, আমার পিঠে ১৬টি বুলেট লাগে, তখন আমি ওই জায়গায় পড়ে গেলে যারা ছিল তারা আমাকে তুলে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওইখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে, আমি মাদার ক্লিনিকে দেখাই, তারপর বাসায় চলে যাই।
ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আজিজুর রহমান স্বপন বলেন, এ দেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন হলেও মানুষের অধিকার আদায় নিশ্চিত হয়নি। কথা বলার অধিকার আমরা সত্যিকার অর্থে অর্জন করতে পারিনি। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান আমাদেরকে নতুন করে আরো একটি বাংলাদেশ এনে দিয়েছে। অভ্যুত্থানের আন্দোলনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনের সূচনা লগ্নে একজন ওসি সাহেব ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজে গিয়ে ব্রিফ করলেন, এই আন্দোলনে যেন কোনো ছেলে পেলে না নামে, যদি ছেলেরা রাজপথে নামে, তাদের লাইফ নষ্ট হবে, পরিবার হয়তো তার ছেলেকে হারাতে পারে কিংবা ভবিষ্যতে তার কোনো চাকরির সুযোগ থাকবে না, সহ বেশ কিছু নেগেটিভ কথা বলে।
এই গণঅভ্যুত্থান যে কত বড় বিজয়, এটিকে ধ্বংস করার জন্য তারা বিভিন্নভাবে পায়তারা করছিলেন। এখনো প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় প্রেতাত্মারা নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে কোনো ফ্যাসিস্টের জায়গা এই বাংলাদেশে কখনো সহ্য করবে না ইনশাআল্লাহ। আগামী দিনে কোনো ফ্যাসিস্টকে রাজপথে নামতে দেওয়া হবে না।
ফ্যাসিস্টের কোনো সহ-চরকে প্রশাসন কিংবা কেউ
নতুন করে যদি কোনো ষড়যন্ত্র করা হয়, বাংলাদেশের মানুষ জুলাই-আগস্টের চেতনা নিয়ে রাজপথে আবারও নামবে।
এই বাংলাদেশে নিয়ে যারা খেলা করেছে, মানুষের অধিকার নিয়ে যারা খেলা করেছে, ওই সমস্ত প্রেতাত্মাকে বাংলাদেশের রাজপথে আমরা নামতে দেব না। আমাদেরকে সেই প্রস্তুতি নিতে হবে, সেনাবাহিনীর লোকজন যেমন যুদ্ধের সময় রাত্রে ঘুমানোর সময় প্রস্তুতি নিয়ে থাকে, হুইসেল বাজলে ছুটবে রাজপথে। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে থাকবো। সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় দাঁড়ানোর জন্য আমরা নতুন আঙ্গিকে শপথ নিয়ে ময়দানে থাকবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস বলেন, ভবিষ্যতে যেন এরূপ পুনরাবৃত্তি না ঘটে, এদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আমাদের প্রত্যেককে, ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে প্রত্যেকটা অন্যায়কে প্রতিহত করার জন্য জোট তৈরি করতে হবে। এখন থেকে মানসিক অবস্থান তৈরি করতে হবে, সততা তৈরি করতে হবে। যদি আমরা আবার ব্যর্থ হয়ে যাই, আরেকটি রক্তক্ষয়ী দিকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঠেলে দেব। এই আন্দোলন থেকে আমরা এই শিক্ষা নেব যে, ভবিষ্যতে আমাদের নিজেদেরকে সেইভাবে তৈরি করে নিতে হবে, যাতে বাংলাদেশের মাটিতে এরকম আরো পরাধীনতা, ফ্যাসিজম, এ ধরনের একমাত্রিক ক্ষমতাযুক্ত সরকার সৃষ্টি না হয়। যাতে সকল নাগরিক তাদের অংশগ্রহণটা নিশ্চিত করতে পারে এবং সকলের উন্নয়নের গতিশীলতা ত্বরান্বিত হয়।
বক্তব্য শেষে শহীদদের রুহের মাফফেরাত কামনায় দোয়া মোনাজাত করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌসের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিদুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. আবু সাজ্জাদ মোহাম্মদ সায়েম, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আশিকুজ্জামান, ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোসাম্মৎ হোসনে আরা খাতুন, উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আব্দুল জব্বার, ভূরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ মুনিরুল ইসলাম, ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আজিজুর রহমান স্বপন, কাজি মোস্তফা, উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, শহীদ পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীগণসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।