অনলাইন ডেস্ক
মধ্য পৌষে দেশজুড়ে জেঁকে বসছে শীত। বইতে শুরু করেছে হিমেল হাওয়া। এ ছাড়া গতকাল বুধবার দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণে কুয়াশার কারণে দিনভর দেখা মেলেনি। এ অবস্থায় ঠান্ডার অনুভূতি গত কয়েকদিনের তুলনায় বেড়েছে। আগামী কয়েকদিন দেশের আবহাওয়া এমনই থাকবে, পূর্বাভাসে বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শৈত্যপ্রবাহ না হলেও তাপমাত্রা কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, বুধবারের মতো পরিবেশ আগামী দুদিন থাকতে পারে। সারা দেশই ঘন কুয়াশায় আবৃত। এটি কাটতেও সময় লাগবে। দেশজুড়ে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, পৌষ মাসে বাতাস হিমেল বা ঠান্ডাই থাকে। এজন্য ভৌগোলিক এবং আবহাওয়াগত কয়েকটি কারণ রয়েছে। এ সময় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ঠান্ডা হাওয়া প্রবাহিত হয়। এই বাতাস হিমালয় অঞ্চল এবং উত্তর পশ্চিম এশিয়া থেকে আসে, যা শীতকালে তীব্র শীতের কারণ হয়। একই সঙ্গে আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাতের অভাব এবং জলীয়বাষ্পের কমে যাওয়ায় হিমেল বাতাস সৃষ্টি করে।
ঘন কুয়াশায় বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে সামান্য কমতে পারে রাতের তাপমাত্রা এবং দিনে অল্প বাড়তে পারে। ঘন কুয়াশায় দেশের কোথাও কোথাও দিনে শীতের অনুভূতি থাকতে পারে।
এদিকে কুয়াশার কারণে বুধবার প্রায় ৬ ঘণ্টা সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ছিল। সকাল ৮টার পর তিনটি ফ্লাইট কুয়াশার কারণ ও ভিজিবিলিটি (দৃষ্টিসীমা) কম থাকায় ঢাকা ছেড়ে আসেনি। পরে দুপুর দেড়টার দিকে আকাশ পরিষ্কার হলে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ভিজিবিলিটি ১০০ মিটার রেকর্ড করা হয়। ফলে সকালের ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত হয়।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, দুপুর দেড়টার পর থেকে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হয়। কুয়াশার কারণে সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ফ্লাইট নামতে পারেনি।
কিশোরগঞ্জে বুধবার বেলা ১১টায়ও দেখা মেলেনি সূর্যের। দুর্ঘটনা এড়াতে সড়কে যানবাহন চলছে লাইট জ্বালিয়ে। হু হু করে বয়ে যায় হিম ছড়ানো হাওয়া। প্রকৃতি যেন আচ্ছন্ন কুয়াশার চাদরে। বৃষ্টির ফোঁটার মতো শিশির পড়ে ভিজে আছে পথঘাট। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি কেউ। এ অবস্থায় বেশি বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ। ফলে নষ্ট হতে পারে বীজতলা, মাঠের ফসল।
দুদিন ধরে উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র শীতের কারণে রাস্তাঘাট প্রায় জনমানব শূন্য। অন্যদিকে, জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোয় বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। গত কয়েকদিন দুপুরের পর আকাশে সূর্য দেখা দিলেও ছিল একেবারেই নিরুত্তাপ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ার তুপফা বলেন, জেলার হতদরিদ্রদের জন্য ৩ হাজার ৯০০ কম্বল বরাদ্দ রয়েছে। আটটি ইউনিয়নে ২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
হিমালয়ের কাছাকাছি, তাই দেশের উত্তরের দুই জেলা পঞ্চগড়-কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা বরাবরই বেশি। এবারও কনকনে শীতের সঙ্গে হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় স্থবির হয়ে পড়েছে জেলা দুটির জনজীবন। কয়েকদিন ধরেই জেলা দুটির তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।
নতুন বছরের প্রথম দিনই ভারি কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে জেলা দুটির জনপদ ও প্রকৃতি। মেঘের কারণে বেলা গড়ালেও দেখা মেলেনি সূর্যের। পাশাপাশি উত্তর-পশ্চিম থেকে বয়ে আসা পাহাড়ি হিম বাতাসে অনুভূত হচ্ছে কনকনে শীত। দিনের বেলায়ও জেলার অনেক জায়গায় খড়কুটো জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে অনেককে। তবে সকালের কনকনে এই শীতের মধ্যেও পেটের তাগিদে ঘর থেকে বের হতে হয়েছে শ্রমজীবীদের।