স্টাফ রিপোর্টার, মোঃ আনোয়ার হোসেন
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পশ্চিম ও পূর্ব থানা এলাকায় মাজার বস্তিতে রাজনৈতিক মদতে রমরমা মাদক ব্যবসা । কয়েক যুগ ধরে এই এলাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই বস্তির একাধিক মামলার আসামী বিএনপি নেতা শাহাব উদ্দিন ওরফে দাবারু ও তার সহযোগীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ও জিম্মি গার্মেন্টস শ্রমিকসহ স্থানীয়রা।
মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাবের পাশাপাশি থানা পুলিশও মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অভিযান করে। কিন্ত মাদক ব্যবসা পরিচালনায় কাজ করছে এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। এর মধ্যে অধিকাংশ মদতদাতারা অলৌখিক ক্ষমতাধর রাজনৈতিক দলের বড় নেতা। সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে মাদক নির্মূল করতে প্রশাসনের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীরা প্রশাসনিক মদতের জন্য দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের ব্যানার ফেস্টুন তৈরি করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের জায়গা দখল করে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মহানগরীর ৫৭ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত টঙ্গী বাজার তুরাগ নদীর পাড়ে ও বিশ্ব ইজতেমা মাঠের পাশে ভরান মাজার বস্তুিতে তাদের বসবাস, মাজার বস্তুিতে বিএনপির নেতা পরিচয় দানকারী শাহাব উদ্দিন ওরফে দাবারু , রবিউল ইসলাম কিং বাবু ও নূর মোহাম্মদ এই তিনজন এর নামে টঙ্গী পূর্ব থানা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক অভিযোগ ও বিভিন্ন মামলা রয়েছে, এদের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে গার্মেন্টস শ্রমিকসহ এলাকাবাসী। কয়েকজন যুবককে সাথে নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে শাহাব উদ্দিন ওরফে দাবারু । গত ৫ আগট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামীলীগ ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর অর্ন্তবর্তীকালীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই টঙ্গী বাজার সেনা কল্যাণ ভবনের পাশে হোন্ডা রোডে বিএনপি’র পরিচয় অফিস বানিয়ে ক্ষমতার জোরে বস্তিতে জমি দখল করে ও ছোট ছোট দোকান ও ঘর উঠিয়ে সেই ঘর ভাড়া করে বিভিন্ন লোক দিয়ে অনেক দূর দূরান্তে শাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি করে তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদক কারবারি বাচ্চু নিহত হওয়ার পর জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার আইরমারী গ্রামের সবল শেখের ছেলে মো. সাহাব উদ্দিন ওরফে দাবারু এক সময় টঙ্গী ছেড়ে পালিয়ে যায়। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে জামালপুরের এক সংসদ এবং মন্ত্রীর আর্শিবাদপুষ্ট হয়ে এবং উনার মাধ্যমে মাদকের মামলাগুলো থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে টঙ্গী মাজার বস্তিতে এসে আবারো বসবাস শুরু করেন। এই দাবারু একজন মাদকের গডফাদার তিনি বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতা পরিচয় দিয়ে তার সহযোগীদেরকে সঙ্গে নিয়ে সারারাত ঘুরে ঘুরে মাদক বিক্রি করেন। অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করেন। এ ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে কক্সবাজার টেকনাফ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের লোক এসে তাদেরকে হেরোইন, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা সহ সব ধরনের মাদক দিয়ে যায়।
দাবারু নিজেকে বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতা পরিচয় দিয়ে কক্সবাজার টেকনাফ সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন রকম নেশাদ্রব্য সংগ্রহ করে থাকেন শুধু ৫৭ নং ওয়ার্ড এলাকায় নয় পুরো গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ছদ্মবেশে সহযোগীদেরকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে মাদক।
বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের পাশে অবস্থিত মাজার বস্তিতে প্রতিদিনই মাদক সেবনকারীদের জমজমাট আড্ডা হয়। এ ছাড়াও বস্তিতে থাকা শাহাব উদ্দিনের বাড়িতে প্রতিনিয়ত নতুন কৌশল অবলম্বন করে নেতাকর্মীদের মন জয় করার জন্য সুন্দরী রমণী নারীদের কে এনে নাইট পার্টির আসর বসান তিনি। এই এলাকায় এখন হাত বাড়ালেই সহজেই মিলছে মাদকদ্রব্য শুধু তাই না দিন দিন স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রসহ এলাকার উঠতি বয়সের যুব সমাজ ক্রমান্বয়ে মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে ধ্বংসের পথে। ফলে দিন দিন অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন সময় দেখা যায় নেশার টাকা জোগাড় করতে তারা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।
এলাকাবাসী দাবি করেন এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে বিএনপি নেতা শাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে নূর মোহাম্মদ ও রবিউল ইসলাম কিং বাবু মিলে তাদেরকে খুব জখমের হুমকী এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেল খাটানোর হুমকি দেন। এমনকি এদেরকে বেশ কয়েকবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করলেও এলাকায় মাদক ব্যবসা থামছে না।
কয়েকবার মামলা হলেও অল্প সময়ে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে তারা।
স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসীর দাবি, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকার পরেও দাবারু, নূর মোহাম্মদ, বাবু কীভাবে এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে এবং মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার দেন। তাদের এতো খুঁটির জোর কোথায়? অবিলম্বে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে এলাকার যুব সমাজকে মাদকের আসক্তি থেকে রক্ষা করার জন্য স্থানীয় প্রশানের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
এবিষয়ে জানতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ দক্ষিণের উপ-পুলিশ কমিশনার এন এম নাছির উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে মাদকের সঙ্গে যে জড়িত থাকবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।