নিজস্ব প্রতিবেদক
রংপুর জেলা প্রশাসন অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দিলেও সেগুলো পুনরায় চালু হয়েছে। ভাটাগুলোতে ইট উৎপাদন ও বিক্রি—কোনো কিছুই বন্ধ হয়নি।
পীরগাছা উপজেলায় বিভিন্ন আইন, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও ইটভাটার দৌরাত্ম্য কমছে না। মালিকরা মানছে না কোনো নিয়মকানুন, ক্রমেই কৃষি জমির ক্ষতি ও দেশের ভূ-প্রকৃতি ধ্বংস করে মাটি পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, কমছে চাষাবাদের জমি ও গাছ। পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই গড়ে উঠেছে ইটভাটাগুলো। আইন অমান্য করে কাঠ পোড়ানো হলেও রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোনো তৎপরতা বা নজরদারি। সরে জমিনে পীরগাছার বিভিন্ন ইটভাটায় গিয়ে জানা যায়। প্রত্যেক ইটভাটাতেই পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস থেকে দাওয়াতি কার্ড দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ইট ভাটার মালিকরা। আর এভাবেই চলছে নবায়ন বিহীন অবৈধ পীরগাছা উপজেলার ২৮ টি অবৈধ ইটভাটা।
সূত্র মতে,পীরগাছা উপজেলার প্রায় ২৮ টির মতো ইটভাটার মধ্যে অনুমতি নেই স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩তে উল্লেখ আছে, ইটভাটায় ফসলি জমির উপরের মাটি (টপ সয়েল) ব্যবহার করলে প্রথমবারের জন্য দুই বছরের কারাদন্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।দ্বিতীয়বার একই অপরাধের জন্য ভাটা কর্তৃপক্ষকে ২ থেকে ১০ বছরের জেল এবং ২ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। অনুমোদন না নিয়ে ইটভাটা স্থাপন করলে এক বছরের কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। কিন্তু প্রশাসন সঠিকভাবে আইন বাস্তবায়ন না করায়, ইটভাটার আগ্রাসনও বন্ধ হচ্ছে না। সরেজমিন দেখা যায়, পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের মনুরছড়া গ্রামের (মেসার্স মিতা ব্রিকস) প্রোপাইটার মোছা : সেলিনা মিজান । উপজেলার বড় হায়াত খাঁ (মেসার্স চৌধুরী ব্রিকস) প্রোপাইটর মো: মাসুদ চৌধুরী। এই ইট ভাটায় ঢুকতেই চোখে পড়ে সাইনবোর্ড মেসার্স আর এ ব্রিক্স প্রোপাইটর মো : আসাদুজ্জামান (রুজু) কিন্তু ভেতরে গিয়ে ইটের গায়ে দেখা যায় এম সি বি । উপজেলার ইটাকুমারী ইউনিয়নের কালীগঞ্জে মেসার্স মিজান ব্রিকস (এম এন বি) প্রোপাইটার সাবেক আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান আবু নাসের শাহ মো: মাহাবুবার রহমান।গত দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে বেনামে পীরগাছা উপজেলার একাধিক ইটভাটা তার নিয়ন্ত্রণে। মাহাবুবার রহমানের আরো একটি ইনভার্টা রয়েছে একই ইউনিয়নের প্রতাপ জয়সেন গ্রামে মেসার্স (এম বি ব্রিকস) এসব ইটভাটা গুলোতে চলছে দিনে রাতে ও মাসের পর মাস ইট পোড়ানোর মহাযজ্ঞ। ভাটাগুলোতে চোখে পড়ে সাইনবোর্ডে এক নাম থাকলেও ইটের গায়ে লেখা থাকে অন্য নাম। ভাটাগুলোতে চোখে পড়ে শিশুশ্রম, জুতা সেন্ডেল পোড়ানো, কাঠ পোড়ানো,নিয়ম মাফিক চুল্লির উচ্চতা না করা,ঝুঁকিপূর্ণ চুল্লি। প্রাইমারি স্কুলের পাশেই ইটভাটা, কৃষি জমি নষ্ট করে ঘনবসতি এলাকায় এই সব ইটভাটা গড়ে উঠেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর অধীনে নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে কোনো ভারী যানবাহন দিয়ে ইট বা ইটভাটার কাঁচামাল আনা নেওয়া নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না এইসব অসাধু ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এ নাজমুল হক সুমনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, যেসব ভাটায় হালনাগাদ নেই তার মধ্যে কয়েকটি ভাটায় অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা অর্থদণ্ড আদায় করা হয়েছে ও কিছু ভাটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেসব ভাটা আইন লঙ্ঘন করে চলছে সেইসব ভাটাগুলোকে ছিল গালা করে বন্ধ করার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
কিন্তু সরজমিনে গণমাধ্যম কর্মীদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে কোন ইটভাটা বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু, মেসার্স খান ব্রিকস, মনিরামপুর একটি ভাটায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আদায় করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে সেই ভাটাটিও চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, অবৈধভাবে কোন ইটভাটা চলতে দেব না, আমাদের এই অভিযান চলমান থাকবে। অভিযান পরিচালনা করার পরে যদি আবারও সেই ইটভাটা গুলো চালু করা হয় তাহলে অর্থদণ্ড সহ তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান তিনি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারা দেশে বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে । পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের উদ্যোগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ১১ কর্মকর্তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা এসব অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দূষণবিরোধী এ বিশেষ অভিযান চলমান থাকবে।