শীতকালীন মৌসুমে সবজির মধ্যে মুলা ও ফুলকপি বাম্পার ফলন হওয়ায় জয়পুরহাটের কৃষকরা মুলার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। হঠাৎ করে এই দরপতনে কৃষকরা চরম হতাশায় ভুগছেন। ফলে তাদের মাথায় হাত পড়েছে। বাজারে মুলা ফুলকপি দাম কমে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি মাত্র ৩ থেকে ৫ টাকায় আর ফুলকপি বিক্রয় হচ্ছে ৩পিচ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা, ছিম ১০টাকা নতুন আলু ২২থেকে ২৫টাকা বেগুন ১৫টাকা পিয়াজের ফুলকা ৩টাকা কেজি কৃষকরা বলছেন, এ দামে সব পন্য বিক্রি করে উৎপাদনের খরচ উঠার দূরের কথা, ভ্যান ভাড়ায় উঠছে না । আর কৃষি বিভাগ বলছেন, উৎপাদন বৃদ্ধি হওয়াতে দাম কমছে।
শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত জয়পুরহাট, প্রচুর পরিমাণে শীতের শাকসবজি আবাদ হয়। তবে বাজারে আমদানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে মুলা আর ফুলকপির। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মুলা এখন ১ টাকা আর ফুলকপি প্রতি কেজি পাঁচ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভাদসা গ্রামের কৃষক আক্কেলপুর উপজেলার খামার কৃষক জানালেন এবার তিনি এক বিঘানজমিতে মুলার আবাদ করেছেন জমি তৈরিসহ বীজ, সার, কীটনাশকে তাঁর বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা।
শুরুর দিকে আশানুরূপ দাম পেলেও বর্তমানে বাজারে মুলার দাম না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন। একই অবস্থা জেলার সব মুলা এবং ফুলকপি চাষির। তাঁরা জানান, শুরুর দিকে আড়াই হাজার টাকা মণ মুলা আর ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস কফি থাকলেও এখন১০০টাকা বস্তা মুলা আর ৩ থেকে ৫ টাকা পিচ কফি ৪০ বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে মুলা, ফুলকপি নিয়ে হাটে এসে ক্রেতার অভাবে বসে থাকতে হয়। কেউ দামই করছে না। এ কারণে কৃষকের লাভ তো দূরের কথা খরচই উঠছে না।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বাদশা ইউনিয়নের দুর্গাদহ গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন , এবার আমি ৬০শতক জমিতে মুলার আবাদ করেছি। সেখানে জমি তৈরিসহ বীজ, সার, কীটনাশকে খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। শুরুর দিকে আশানুরূপ দাম পেলেও বর্তমানে বাজারে মুলার দাম না থাকায় চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার খেজুর তলি গ্রামের কৃষক রহমান জানান , আমি ৩০ শতাংশ জমিতে ফুলকপি লাগিয়েছি। প্রথম দিকে কিছুটা ভালো দাম পেয়েছি, এখন কপি ৫ টাকা পিস দামও উঠছে না। এমন অবস্থায় আমাদের চাষের খরচও উঠবেনা।
জয়পুরহাট শহরের নতুনহাটের ব্যবসায়ী নান্টু শেক জানান , সবজি কিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ীর আড়তে নিতে গাড়ি ভাড়া বেড়েছে। সেইসঙ্গে প্রতিমণ মুলা ও ফুলকপিতে শ্রমিক খরচসহ ঢাকায় পৌঁছাতে খরচ পড়ে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, এমন অবস্থায় আমরাও খুব বেশি লাভ করতে পারছি না। শহরের নতুনহাটের খুচরা ব্যবসায়ি আনোয়ার হোসেন বলেন দুই বস্তা মুলা আর ৫০ পিচ কপি বিক্রি করতে না পারাই গরুকে খেতে দিয়েছি, অন্য আরেক দোকানদার বাবু বললেন আমি মুলা, কপি, আর পিয়াজের ফুলকা কিনা বাদ দিয়েছি এই সব পন্য কিনে দুই বার ক্ষতি গ্রস্ত হয়েছি।
রাহেলা পারভীন, উপ-পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, জয়পুরহাট দৈনিক আজকের বাংলার প্রতিনিধিকে জানান,
এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে গেছে। এবার অন্য সবজির সঙ্গে চাষিরা একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে মুলা,ফুলকপি চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় হাট-বাজারে আমদানিও বেশি। সবজি পচনশীল পণ্য। সংরক্ষণ সুবিধা না থাকায় ক্ষেত থেকে উত্তোলন করেই কৃষকদের বিক্রি করতে হয়। আবার সিন্ডিকেটসহ নানা সংকটে প্রকৃত মূল্য পান না তারা। জানালেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক।
চলতি রবি মৌসুমে ৪ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে এবার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়ছে।