নিজস্ব প্রতিবেদক
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলদে হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে সরিষা ক্ষেত। এই জমির পাশেই বসানো হয়েছে মৌবাক্স। এ কারণে মৌমাছির গুণগুণ শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে সরিষা ক্ষেত। একইসঙ্গে সরিষা ও মধু উৎপাদনে ঝুঁকছে ওই অঞ্চলের কৃষকরা। এতে করে লাভবান হচ্ছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই ইউনিয়নের পাটোয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নয়নাভিরাম সরিষা ফুলের দৃশ্য। এখানেই দেখা মিলছে স্থানীয় ও অন্য অঞ্চলের কৃষকদের মধু উৎপানের চিত্র। এসব কৃষকদের লাভবান করতে সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিয়াউল হক রিন্টু।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় ছয় হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নাকাই ইউনিয়নের ৬৫০ হেক্টরে এ ফসলের চাষ হচ্ছে। এখানকার পাটোয়া এলাকায় আবাদ হয়েছে ৩৪০ হেক্টর। এ অঞ্চলে গত বছরের তুলনায় আবাদ বেড়েছে অনেক বেশি। উফশী জাতের বারি-১৪, ১৫ ও ১৭ জাতের এই সরিষা আবাদে ঝুঁকছেন প্রান্তিক কৃষকরা। এছাড়া ওই প্রকল্প থেকে মধু উৎপাদনের জন্য কৃষকদের মধ্যে অত্যাধুনিক মৌবাক্স ও মধু নিঃষ্কাশন যন্ত্র প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা সরিষা আবাদের পাশাপাশি ক্ষেতের পাশেই মধু উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে আসা মৌচাষিরা সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌবাক্স স্থাপন করে মধু উৎপাদন করছে। ফলে সমন্বিত এই চাষে লাভবান হচ্ছেন সরিষা ও মৌচাষিরা।
এ বিষয়ে পাটোয়া এলাকার কৃষাণী মমজান বেগম জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৫০ শতক জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে করে বিঘায় পাঁচ থেকে সাত মণ ফলন পেতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, সরিষা আবাদে প্রতি বিঘায় খরচ হয় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা। বাজারে দাম ভালো থাকলে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় সরিষা বিক্রি করা সম্ভব। এর মাধ্যমে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
শরিফুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নের সহায়তায় যেমন সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি পর্যাপ্ত পরিমাণ মধুও উৎপাদন হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সরিষার সঙ্গে মধু সংগ্রহের কাজ। সমন্বিত এই চাষে লাভবান হওয়া সম্ভব।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিয়াউল হক রিন্টু বলেন, তৈল জাতীয় ফসল আবাদ বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে আমাদের এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে করে ভোজ্য তেলের চাহিদা পুরণ ও বাই প্রোডাক্ট হিসেবে মধু চাষে কৃষকদের লাভবান করতে প্রণোদনা দেওয়াসহ সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।