জাহাঙ্গীর আলম অর্ণব
(শেষ পর্ব)
প্রতিদিনের মতো আজ ও সুমন রুপা কে পড়াতে এসেছে। কিন্তু বাড়িতে পৌঁছাবার পর জানতে পারলো রুপার অনেক জ্বর। রুপার আম্মু বললো আজ হয়ত রুপা পড়তে পারবে না অনেক জ্বর। সুমন রুপার কপাল এ হাত দিলো।দেখলো অনেক জ্বর। রুপা ঘুমের ঘোরে শুধু বাবা বলে ডাকছে।রুপার বাবা তখনও বাসায় ফেরেনি। সুমন রুপার জ্বর দেখে ভয় পেলে গেল, নিজের সেই ছোট্ট বোনের কথা মনে পড়তে লাগলো।সুমন দেরি না করে ডাক্তার ডাকার কথা বললো।কিন্তু রুপার আম্মু বলছে এখান থেকে ডাক্তারের বাসাটা অনেক দুরে। কথাটা শেষ না হতেই সুমন দ্রুত বাইসাইকেল টা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। ডাক্তার কে সাথে করে নিয়ে এলো। ডাক্তার রুপা জ্বর পরীক্ষা করে ঔষধ দিলো
এবং ডাক্তার বললো নিয়মিত যেন ও ঔষধ গুলা খাই। ডাক্তারের ভিজিট টা রুপা আম্মু দিতে গেলেই বাধা দিলো সুমন। সুমন বললো আন্টি আমি দিয়ে দিব।আপনি কোন চিন্তা করবেন না।আপনি রুপার পাশে থাকেন। এই কথা বলেই ডাক্তারের ব্যাগ টা নিয়ে ডাক্তার কে সামনে আগিয়ে দিলো। ডাক্তার চলে গেলেন।সুমন খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আনমনে কি যেন ভাবতে লাগলো। সুমনের মনে কেমন জানি প্রশান্তি বিরাজ করছে। কেননা রুপা কে সুমন শুধু স্টুডেন্ট-ই ভাবে না।রুপা কে ছোট্ট বনের মতো ভালোবাসে। ছোট্ট বোনটি কষ্ট করবে আর ভাই কি সেটা মানতে পারে ! না পারে না ,ছোট্ট বোনটির জন্য কিছু করতে পারায় মনের মধ্যে অনেক শান্তি পাচ্ছে। একটু একটু করে রুপা সুস্থ হয়ে উঠলো। আগামীকাল থেকে আবার পড়তে পারবে সে।
রুপা: মা,ওমা একটা কথা জানো??
রুপার আম্মু: কি মা..?
রুপা: জানো মা, ভাইয়াটা না অনেক ভালো, আমাকে অনেক সুন্দর করে পড়াগুলা বুঝিয়ে দেই। একটু ও বকা দেই না।
রুপার আম্মু: হুম তোমার ভাইয়াটা অনেক ভালো মা,আর আমার এই যে লক্ষ্মী মেয়েটা সেও অনেক ভালো(রুপার আম্মু বললো)
মা ও মেয়ের কথোপকথন শেষ না হতেই বাইরে থেকে ডাক আসলো রুপার- রুপা দৌড়ে চলে এলো। বাইরে এসে দেখলো ভাইয়া । রুপা ভাইয়া কে সালাম দিয়েই বললো।ভাইয়া আমি সুস্থ হয়ে গেছি।আমি আজ থেকেই পড়বো ভাইয়া(চাঞ্চল্য কণ্ঠে বললো রুপা)
সুমন রুপার মুখে মিষ্টি হাসিটা দেখে নিজ হাসিমুখ নিয়ে বললো,হ্যাঁ আমরা আজ থেকেই পড়বো আমার লক্ষ্মী বোনটি। আবার ও শুরু হলো রুপাকে পড়ানো। সুমন যে বিষয় গুলা পড়াই সব গুলা রুপা মন দিয়ে পড়ে।
ডিসেম্বর মাসে রুপার ফাইনাল এক্সাম। সুমন খুব সুন্দর করে রুপা কে পড়াতে থাকে, যেন রুপা এবার ফাস্ট হয়। নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া রুপা নামক মেয়েটি ও যেন ভাল রেজাল্ট করে ,একদিন অনেক বড় হয়ে দিনমজুরি রিকশাচালক বাবার দুঃখ ঘুচিয়ে মুখে হাসি ফুটাতে পারে
কেননা মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়া উঠা সুমন জানে ,সন্তানের ভাল রাখার তাগিদে বাবা মা কতটা কষ্ট করে। প্রত্যেকটা মা বাবা ই চাই তার সন্তান যেন মানুষের মত মানুষ হতে পারে।যাকে নিয়ে গব’ করা যাই। ঠিক তেমনি করে রিকশাচালক আরিফুল মিয়া সেই স্বপ্ন দেখে।তাই তিনি মন থেকে মেয়েকে কে লেখাপড়া করাতে চেয়েছে।
আগামীকাল রুপার গণিত পরীক্ষা।সুমন খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছে রুপা কে। রুপা ও মন দিয়ে পড়ছে। এক ঘণ্টা পর সুমনের পড়ানো শেষ হলো। রুপাকে বললো সুন্দর করে পরীক্ষা দিবে কেমন।
রুপা: আচ্ছা ভাইয়া(মিষ্টি হাসি দিয়ে)
কিছুদিন পর রুপার পরীক্ষা শেষ হলো। এবার অপেক্ষার পালা,কাঙ্খািত রেজাল্টের
রেজাল্টের দিন রুপা স্কুলে পৌঁছালো। ক্লাস ওয়ান থেকে রেজাল্ট ঘোষণা শুরু হলো, অপেক্ষার প্রহর টা নিকটে আসলো, এবার তৃতীয় শ্রেণি থেকে চতুর্থ` শ্রেণি তে যারা উঠবে তাদের রেজাল্ট ঘোষণা করা হবে। প্রথমে যে নামটা উচ্চারিত হলো সেই নামটা আর কারো নাই।সেই নামটা হলো রুপা। রুপার রেজাল্ট শুনে আনন্দে বাসার দিকে ছুটতে লাগলো।
রুপা : মা ও মা… মা গো কই তুমি ? (বাসায় পৌঁছে)
রুপার আম্মু: কি হয়েছে রুপা ? আসতেছিতো
রুপা : মা গো মা,, জানো মা আমি ফাস্ট হয়েছি
কথাটা শুনেই রুপার আম্মুর চোখে আনন্দের অশ্রু ঝরতে লাগলো।মেয়ে কে বুকে জড়িয়ে যেন তিনি চোখের অশ্রু মুছতে মুছতে বললেন, মা.. আজ আমি অনেক খুশি রে মা।তুই তোর স্বপ্ন পূরণে একধাপ এগিয়ে গেছিস।তোকে আর ও অনেক বড় হতে হবে মা। মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। পারবি না মা বল? রুপা:– হ্যাঁ মা আমি পারবো।
রুপার আম্মু সুমন কে ফোন দিয়ে অতি আনন্দের সাথে রেজাল্ট জানালো। সুমন ও আজ অনেক খুশি, কেননা সবার পরিশ্রম আজ সার্থক হয়েছে। পরদিন সুমন রুপাদের বাসায় গেলো, সুমন কে দেখা মাত্রই ভাইয়া ভাইয়া বলে দৌড়ে এসে বললো। ভাইয়া আমি ফাস্ট হয়েছি। কথাটা শোনা মাত্রই দুজনের মুখেই হাসি। আনন্দের এক সুখময় প্রতিচ্ছবি বিরাজ করছে। অতঃপর সুমন রুপা কে একটা কলম উপহার দিলো এবং বললো, লক্ষ্মী বোনটি আমার এই কলম টা তুমি চালাবে সত্য প্রকাশে ,চোখের সামনে বই এর পাতায় থাকা মনুষ্যত্বের বিরল বানী ছড়িয়ে দিবে এ বিশাল ধারায়।।
সুমন আজ অনেক খুশি আজ তার প্রাপ্য সম্মান সে পেয়েছে। হোক না কম টাকা কিন্তু স্টুডেন্টের কাছ থেকে ফাল ফলাফল পাওয়ার মতো এত আনন্দের আর কি হতে পারে! সুমন এর ও সামনে এক্সাম, মনে একটি টিউশনি লাইফের সফলতার গল্প আর নিজ স্বপ্ন পূরণে প্রাণবন্ত চেষ্টাই ছুটে চলেছে বহুদূর——-
হয়ত আরো অনেক টা সময় টিউশনি লাইফের গল্প জমা হবে।জমা হবে কিছু সৃতি থাকবে কিছু সফলতার গল্প।।