মোঃ তারেক রহমান শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি
বাংলা সাহিত্যের চিরকালের স্মরণীয় কাব্যনাটক ‘বিসর্জন’ থেকে ছোটগল্প ‘ছুটি’, ‘পোস্টমাস্টার’ আর ‘সোনার তরী’ কাব্যের বিখ্যাত কবিতাবলি ও অজস্র গান-নাটক-প্রবন্ধের সোনালি অধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত রবীন্দ্রনাথের শাহজাদপুর কাছারি বাড়ি।
তৎকালীন পাবনা জেলার অন্তর্গত সিরাজগঞ্জ মহকুমার একটি থানা একেবারে নিভৃত পল্লী ছিল শাহজাদপুর। চারদিকে নদ-নদী, করতোয়া, বড়াল, গোহালা, হুড়োসাগর আর অদূরেই বিশাল চলনবিল। নিভৃত এই উদার প্রকৃতিতে এসে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিশীল প্রতিভা যেন পেয়েছিলেন নতুন রসদ। রবীন্দ্রনাথ ১৮৯০ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত মোট ৮ বছর জমিদারির কাজে শাহজাদপুরে অবস্থান করেন। এবং এই দোতলা ভবনে বসেই রচনা করেন অনেক বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে বসেই রচনা করেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ সোনার তরী, বৈষ্ণব কবিতা, দুইপাখি, আকাশের চাঁদ, পুরস্কার, হৃদয়, যমুনা, চিত্রা, চৈতালীর ২৮টি কবিতা। রচনা করেন ছিন্নপত্রাবলীর ৩৮টি পত্র। পোস্টমাস্টার, ছুটি, সমাপ্তি, ক্ষুধিত পাষাণ, অতিথির মতো ছোটগল্প, বিসর্জন নাটক ও অজস্র বিখ্যাত গান।
শাহজাদপুর কাছারি বাড়ি ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত একটি দ্বিতল ভবন। বর্তমানে পুরো ভবন জাদুঘর হিসেবে সাধারণ দর্শকদের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়েছে। জাদুঘরের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ১৬টি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে রয়েছে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, কৃষক বন্ধু রবীন্দ্রনাথ অর্থাৎ নানা বয়সের এবং নানা সময়ের ছবি। কবির ব্যবহার্য চঞ্চলা ও চপলা নামের দুটো স্পিডবোট, পল্টন, ৮ বেহারার পালকি, কিছু কাঠের চেয়ার, টি টেবিল, সোফাসেট, আরাম কেদারা, খাট, ব্রোঞ্জের জমিদারি মনোগ্রাম ৮টি, ২ জোড়া খড়মসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র।
উল্লেখ্য, সিরাজগঞ্জ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে শাহজাদপুর উপজেলা শহরে অবস্থিত রবীন্দ্রনাথের কাছারি বাড়ি। এটি মূলত রবীন্দ্রনাথের পৈত্রিক জমিদার বাড়ি। ১৮৪২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ইংরেজদের কাছ থেকে প্রথম বাড়িটি কিনে নেন। পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯০ সালের দিকে প্রথম শাহজাদপুর এই কুঠিবাড়িতে আসেন এবং ৮ বছর অবস্থান করেন। ১৯৬৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় ভবনটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষণা করে। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার এই কুঠিবাড়ির গুরুত্ব অনুধাবন করে। পরে বিভিন্ন শিল্পকর্ম সংগ্রহপূর্বক একে জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি স্মৃতি জাদুঘরের কাস্টরিয়ান মো. আবু সাইদ ইনাম তানভীরুল বলেন, কাছারি বাড়ি দেখভালের জন্য মোট ১৮ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাজ করেন। রবিবার ও অন্যান্য সরকারী ছুটি ব্যাতীত মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাছারি বাড়ি জাদুঘর খোলা থাকে । দর্শনার্থীদের জন্য জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা।